তৃঞ্চায় শরবতের নামে কি পান করছে গোপালগঞ্জ বাসী ?

Slider সারাদেশ

News Photo

এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ :
বাইরে যখন তীব্র গরম, তখন দেহের ভেতরেও তৈরি হয় বাড়তি তাপ। সব মিলিয়ে গরমে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে। ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা, কাজে অমনোযোগ- কী নেই সে তালিকায়!

এ সময় প্রচুর ঘামের কারণে একটু ক্লান্তি, একটু অলসতা মানুষকে কাবু করে দেয়। এ জন্য প্রকৃতি যখন অগ্নি ঝরায় তখন আপনি তৃঞ্চা নিবারণের জন্য ছুটে যাচ্ছেন ফুটপাতের কোনো ভাসমান শরবতের দোকানে। সময় বাঁচাতে অনেকেই রাস্তার পার্শ্বে বিক্রী হওয়া নানা রকমের পানিয়, আঁখের রস, বেলের শরবত পান করেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপরিস্কার পানিতে গ্লাস ধোয়া, এক গ্লাসে অনেকজন মুখ লাগিয়ে পান করার ফলে জীবানু বেড়ে ওঠার নিরাপদ স্থান এগুলো। এর মাধ্যম্যে নানা রকম অসুখ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

কি পান করছেন আপনি সে সব ভাসমান দোকানে? গ্লাসে চুমুক দেয়ার আগে একটু ভেবেছেন কি?
শরবতে এমন সব লোভনীয় ফল মূল একসাথে পাচ্ছেন যা দেখলেই পান করতে মন চাইবে যে কারো। কাগজি লেবু, তেঁতুল, বেল, কমলা, আপেল, খেজুর, ভেষজ উপাদান ইসবগুল, ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) তোকমা প্রভৃতি দিয়ে শরবত তৈরি করছে ফুটপাতে দাড়ানো লোকটি।

গোপালগঞ্জের লঞ্চঘাট ব্রিজে শরবত বিক্রি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাই। ৮ম শ্রেনী পাস করার পর পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে আর পড়ালেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পরিবারের হাল ধরতে এক মুরুব্বীর পরামর্শে শরবত বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এখন ভালই চলছে তার পরিবার।

গোপালগঞ্জের এই ভাইয়ের মত আরো অনেক বেকার যুবক শহরের পার্ক,বাস স্ট্যান্ড সহ জনবহুল স্থানে শরবত বিক্রির মাধ্যমে তাদের পরিবারের হাল ধরেছেন ঠিকই। কিন্তু এই শরবত তৈরিতে তারা কি স্বাস্থ্য সম্মত পালীয় পরিবেশন করছেন? একটু দৃস্টির দিলেই আড়ালে নয়।

এই প্রতিবেদক এম আরমান খান জয়ের এর সাথে কথা হয় শহরের রিস্কা চালক শিহাবের সাথে। শিহাব সাহেব আপনি কি জানেন এই শরবত কিকি উপাদানে তৈরি? ‘ভাই গরমে খাই ভাল লাগে, অনেক জিনিস একসাথে দামও কম, লোকজন খাই আমিও খাই’।

এই শরবত বিক্রি করে কিছু লোকের কর্ম-সংস্থান হচ্ছে; আর শিহাবের মত সাধারণ কর্মচারি বা সাধারণ লোকের তৃঞ্চা ও নিবারণ হচ্ছে।
এসব শরবতের প্রধান উপাদান নির্ভেজাল খোলা পানি, সাথে থাকে বরফের টুকরো যা ক্ষয়ে ক্ষয়ে পানির সাথে মিশে তৈরি হয় শীতল পানীয়ে। বরফ তৈরি হচ্ছে খোলা পানি দিয়ে । যা মাছ-মাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর শরবতকে রসাতœক করে তোলার জন্য চিনির পরিবর্তে ব্যবহার হয় চাকারিন, অপরিস্কার পাত্র, রাস্তার ধোলা বালিতো আছেই।

তৃষ্ণা মেটানোর শরবতে ব্যবহৃত বরফ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বরাবর। কেউ দাবি করছে শরবতে ব্যবহৃত বরফগুলো মাছের জন্য প্রযোজ্য। আবার কেউ বলছে শরবতে মাছের বররফ নয়। মর্গে ব্যবহৃত বরফ শরবতে ব্যবহার হচ্ছে। প্রাণ জুড়ানে শরবত যে বরফ ব্যবহার হচ্ছে সেটি কি আধোও পরিষ্কার জীবানুমুক্ত পানি দিয়ে বানানো?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরফ কারখানার এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা মাছে ব্যবহারের জন্য এই বরফ তৈরি করি। তাই সরাসরি পুকুর বা অপরিচ্ছন্ন পানি দিলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে যারা কিনছে, তারা যদি এসব বরফ পানীয় তৈরিতে ব্যবহার করে, তাহলে আমাদের দোষ কোথায়?
এমুহূর্তে গরমের তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে তৃঞ্চা নিবারণে খোলা শরবত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। ফলে অফিসে কাজের ব্যস্থতার মাঝে তৃঞ্চা মিটানোর চেয়ে কর্মকামাইয়ের পরিমানটা নেহায়েৎ বাড়ছে।

এতে করে নিজের অজান্তে বহু রোগের জীবানু প্রতিনিয়তই নিজের শরীরে অবাধে ঢুকার ব্যবস্তা করছে সাধারণ মানুষ। যা প্রাথমিক পর্যায়ে জানতে না পারলেও ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা ও হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’র মতো রোগগুলো বহন করছে পরবর্তীতে।

চিকিৎসকেরা মনে করছেন এসব অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় পানীয় খেলে কমে যেতে পারে আপনার শুক্রাণুর পরিমাণ৷ কারণ কোন খাবারে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকলে, সে খাবার খেলে পুরুষদের শুক্রানু-র পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে।

পরিশেষে,কোন পানীয় পানের আগে এসবের গুনগত মান, বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার। এসব পরিহার করে সার্বক্ষনিক হাতের নাগালে পানির বোতল রেখে পানি পানের চাহিদা পুরণ করে সুন্দর, সুস্থ থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন, সুস্থ-সুন্দর থাকুন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *