শিক্ষার কারিগর আজ নেতাদেরকাছে কেন লাঞ্চিত-অপমানিত?

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

mostafa

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, যে জাতী যত বেশী শিক্ষিত সে যাতি তত বেশী উন্নত, শিক্ষা সুষ্ঠ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মৌল উপাদান। আর এই উপাদান যে সমাজে যত বেশি প্রবেশ করেছে সেই সমাজ ততবেশি উন্নয়ন, উৎপাদন ও কল্যাণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। জাতী গঠনে শিক্ষা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

আর এই শিক্ষাই শুরু হয় প্রথম মায়ের কাছ থেকে। একটি প্রবাদ আছে আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব।

একটি জাতির, সভ্যতার প্রধান মাপকাঠি শিক্ষা। শিক্ষাকে তাই যুগে যুগে জাতির মেরুদন্ড হিসাবে সকলে স্বীকৃতি দিয়েছেন । যে যত উচ্চশিখরে আরোহন করেছেন, যে যত সম্মান অর্জন করেছেন, প্রত্যেকেরই পিছনে রয়েছে শিক্ষক কে সম্মন করা , শ্রদ্ধা করা। আজ এই শিক্ষকের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ সবকিছুই নেই, আছে শুধু পদে পদে অপমান আর লাঞ্চনা।

৩১ মার্চ দেখলাম শিক্ষিকাকে ধর্ষণ করল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নামে একটি শিরো নামে জাতীয় পত্রিকা সহ অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ হয়। ঘটনাটি ঘটে ৩১ মার্চ সকাল সোয়া নয়টার দিকে। ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের হারিছ-রোকেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধর্ষিত হন ওই সহকারী শিক্ষক। স্কুল চলাকালীন সময়ে শিক্ষক মিলনায়তনে আটকে ধর্ষণ করেছে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনাম আহমেদ। এই এনাম আহমেদ একজন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। এই এনামের কাছে শিক্ষাজাতীর কারিগর ধর্ষিত হয়।

দরজা বন্ধ করে অধ্যক্ষকে পেটালেন জেলা আ.লীগ নেতা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাকিল। শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন জমসেদ আলী মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম রেজা। শাকিল কলেজে থাকা কয়েকজন শিক্ষককে বের করে দিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে চাচা-ভাতিজা মিলে অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম রেজা পেটায়। গত মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ চলাকালীন ঘটনাটি ঘটে। একজন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তার কাছেও অধ্যক্ষ লাঞ্চিত।

১৯ আগষ্ট বরগুনার বেতাগী উপজেলায় স্বামীকে আটকে রেখে উত্তর করুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে গণধষন করে। স্কুলে প্রবেশ করে প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে ৬-৭ যুবক ভেতরে ঢুকে অপর একটি কক্ষে শিক্ষিকাকে নিয়ে যুবকরা উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। স্থানীয়রা জানায়, এরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত।

শিক্ষার কারিগর যারা তারও পদে পদে আজ অপমানিত লাঞ্চিত, এই অপমান লাঞ্চনার শেষ কোথায়। শিক্ষাগুরু সম্মান ভূলুণ্ঠিত করে হায়েনার আঘাতে জর্জরিত আজ মানুষ গড়ার কারিগর। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার প্রশ্ন কেন একজন শিক্ষককে যাদের হাতে নেতৃত্ব তাদের হাতে হাতে মার খেতে হবে, অপমানিত হতে হবে, লাঞ্চিত হবে? কি তার অপরাধ। মানুষের ভালো চাওয়া, সমাজের উপকার করা, সর্বোপরি শিক্ষার আলো জ্বেলে মানুষের মনের অন্ধকার দূর করা, মাথা উঁচু করে কোন বাধা বিপত্তির কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা দেয়া- এগুলোই কি তার অপরাধ?

পৃথিবীর অনেক কিছু সম্পদ- অর্থ দিয়ে ক্রয় করা যায়। কিন্তু বিদ্যা এমন এক রতœ তা কোনদিন অর্থ দিয়ে ক্রয় করা যায় না। বিদ্যা অর্জন করতে হয়। শিক্ষক তার মেধা দিয়ে একজন ছাত্রকে তার অর্জিত জ্ঞান বিতরণ করেন এবং একজন মেধাবী ছাত্র তা গ্রহণ করেন। এভাবে জ্ঞান সঞ্চয় করা যায়। পৃথিবীর বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তিরা প্রথমে এভাবে তাদের শিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞান আহরণ করে তা বিকশিত করে জ্ঞানের বিস্তার ঘটিয়েছেন। কেউই জন্মগতভাবে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক হয়নি। তাকে তার শিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করে তা পরিশিলিত করেই তারা পৃথিবীতে নামী-দামী ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

আমাদের প্রশ্ন এই আঘাত কি সরকারি কাজে বাধা প্রদান নয়? একজন শিক্ষাগুরুর সম্মান সবার উপরে বিবেচনায়, এই অন্যায়ের বিচারের ভার সরকারের উপর ছেড়ে দিলাম।

লেখকঃ গোলাম মোস্তফা (জি এম বারী )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *