৪৫ লাখ টাকার জন্য ব্যবসায়ী জাফর ইকবাল ও তাঁর বন্ধু মিরাজ গাজীকে অপহরণ করেছিল মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা সেলিম মোল্লা ও তাঁর ছেলে ছাত্রলীগের নেতা রাজিবুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র।
তেজগাঁও থানায় করা অপহরণের মামলায় এ কথা উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ী জাফর ইকবালের ভাগনে হাফিজুর রহমান। সেলিম মোল্লা হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ছেলে রাজিবুল একই উপজেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কাছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সামনে থেকে ব্যবসায়ী মো. জাফর ইকবাল (৪০) ও তাঁর বন্ধু মো. মিরাজ গাজীকে (৩৫) মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়েও অপহৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেননি। দুদিন পর গত রোববার রাতে র্যাব-২-এর একটি দল মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকাবাজার-সংলগ্ন কালই গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মোল্লার বাসা থেকে অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে। সেলিম মোল্লা, তাঁর ছেলে রাজিবুলসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও মুক্তিপণ হিসেবে নেওয়া ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর গত সোমবার ছাত্রলীগ থেকে রাজিবুলকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
র্যাব বলেছে, অপহরণকারীদের নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী জাফর ইকবাল ও তাঁর বন্ধু মিরাজ গাজীকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপহরণকারী গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গত সোমবার ঢাকার তেজগাঁও থানায় অপহরণের এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়। তেজগাঁও থানায় করা অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার ১০ জনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর হরিরামপুর থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তেজগাঁও থানায় অপহরণের মামলায় বলা হয়েছে, অপহরণকারীরা জাফর ইকবালকে দিয়ে তাঁর স্ত্রী ও মায়ের কাছে ফোন করান। এ সময় ৪৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ওই টাকা না দেওয়া হলে দুজনকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয় মোবাইলে। পরে গত রোববার দুপুরে ঢাকার শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁও কার্যালয়ে গিয়ে জাফর ইকবালের পরিবার র্যাব-২-এর কাছে আবেদন করে। হরিরামপুর থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, হরিরামপুর থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনকে আদালতে পাঠিয়ে তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
সেদিনের অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব-২-এর উপপরিচালক মেজর মোহাম্মদ আলী বলেন, তেজগাঁও ও হরিরামপুর থানায় হওয়া দুই মামলার তদন্ত করবে র্যাব। মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর গ্রেপ্তার আসামিদের হেফাজতে নিয়ে পলাতক পুরো চক্রকে গ্রেপ্তার করা হবে। মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও স্থানীয় লোকজন জানান, গণপূর্তের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়েও বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ায় এলাকায় সেলিম মোল্লা ও তাঁর ছেলে রাজিবুলের বেশ দাপট ছিল।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।