প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঊনিশ’শ একাত্তর সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি এবং অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধের শুরু। এই যুদ্ধে এক মরণপন সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি। এই সংগ্রাম অনেক বেশী সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। তবে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে কঠোর পরিশ্রম করি এবং সৎ পথে থাকি তবে, ইনশাল্লাহ জয় আমাদের অনিবার্য।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ (এনএসটি) এবং গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের বিপুল সমুদ্র সম্পদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিপুল সমুদ্র সম্পদ রয়েছে। ব্লু-ইকোনমির এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নতুন নতুন গবেষণা এবং উদ্ভাবনে কাজ করতে হবে।
‘সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছি। যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে,’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কক্সবাজারে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিউট প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সমুদ্রপাড়ে একটি সি অ্যাকুরিয়াম গড়ে তুলবো। এটি গবেষণায় যেমন প্রয়োজন, তেমনি পর্যটক আকর্ষণেও ভূমিকা রাখবে।
তিনি গবেষণার জন্য সরকারের জাহাজ ক্রয় সহ বিভিন্ন উদ্যোগের তথ্য এসময় তুলে ধরেন।
গবেষণায় সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের পাট তো ধ্বংস করেই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে পাটকে আমরা বহুমুখী করার চেষ্টা করছি। গবেষণা করে পাটের জিনোম উদ্ভাবন করা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, ধানের গবেষণা করা হচ্ছে। বস্ত্রের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ইনস্টিটিউট গঠন করা হয়েছে, যারা এসব ক্ষেত্রের উন্নয়নে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরমাণু কমিশন রয়েছে, যা জাতির পিতা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছি। এজন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল দরকার। সেভাবে ট্রেনিংও দেওয়া হবে। পরমাণু বিদ্যু কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য বিজ্ঞানী ও গবেষক দরকার। কয়েকটা ধাপে এর নিরাপত্তা থাকবে। আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিয়েছি।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রের তলদেশে (নেভীর সাবমেরিন) গিয়েছি, স্যাটেলাইটও উৎক্ষেপণ হবে। অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।
বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের কথা বিবেচনায় নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন সাইন্স এন্ড আইসিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আমরা গঠন করেছি ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট’। জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরিই এ ট্রাস্টের উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে ছাত্রছাত্রী ও গবেষকগণের মধ্যে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে।
তাঁর সরকার দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের আগেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার সকল উদ্যোগ সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা জীব-প্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে লবণসহিষ্ণু এবং খরা-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এটি আমাদের মাইলফলক অগ্রগতি। বিজ্ঞানীরা ধানের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবেশবান্ধব জীবানু-সার উদ্ভাবন করেছেন। হিউম্যান ডিএনএ প্রোফাইলিং সুবিধা সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। বস্ত্র, চামড়া ও ডিটারজেন্ট শিল্পে ব্যবহারের জন্য এনজাইম তৈরি সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দিনে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। প্রযুক্তিনির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক, দারিদ্র্যমুক্ত, মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের অংশ বিশেষ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২০০৯-১০ অর্থ-বছর থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থ-বছর পর্যন্ত ৮ হাজার ১২ জন ছাত্রছাত্রী ও গবেষকের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৯ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬ হাজার টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। বর্তমান ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে ফেলোশিপ প্রদানের লক্ষ্যে ১৪ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে গবেষণা অনুদানের জন্য ১৪ কোটি ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।