স্পিনের দেশে স্পিনারের আকাল!

Slider খেলা

142433Spinইনিংসের প্রথম বল। টেস্টের প্রথম বল। তাঁর ক্যারিয়ারেরও প্রথম বল। সোহাগ গাজীর করা সেই বলটিকেই কিনা ছক্কা মেরে দিলেন ক্রিস গেইল!

ওই এক ছক্কা প্রতিফলক নয় সোহাগের ক্যারিয়ারের। কেননা ২০১২-র নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই সিরিজে পরবর্তী সময়ে গেইলকে বড্ড ভুগিয়েছেন এই অফ স্পিনার। পরের বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পাশাপাশি বোলিংয়ে করেন হ্যাটট্রিক। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যে কীর্তি নেই কারো।

কিন্তু এরপর? বাংলাদেশের আরো অনেক স্পিনারের মতো হারিয়ে গেছেন সোহাগ গাজীও। ১০ টেস্টে ৩৮, ২০ ওয়ানডেতে ২২ এবং ১০ টি-টোয়েন্টিতে ৪ উইকেটের রেকর্ডে আটকে আছেন যিনি। অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে আবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে সে রেকর্ড শানিত করবেন, অমন আশাবাদ করার লোক নেই তেমন একটা।

সোহাগ ও আবুল হাসানের অভিষেক একই সিরিজে। ওই সিরিজ থেকে ধরলে গত পাঁচ বছরে জাতীয় দলে নতুন পেসার খেলেছেন ১১ জন। স্পেশালিস্ট স্পিনারের অভিষেকও ঠিক ১১ জনেরই। এঁদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম বাদে অন্যরা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য জায়গা খোদাই করতে পারেননি জাতীয় দলে।

অপচিত প্রতিভা হিসেবে সবার ওপরে থাকবে বোধ করি জুবায়ের হোসেনের নাম। এই লেগ স্পিনারে কতটা মুগ্ধ ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে, তা সবার জানা। প্রতিভার প্রতিফলনে টুকটাক পারফরম্যান্সও ছিল। কিন্তু বেখেয়ালি জুবায়ের এরপর ডুবে যান দুঃসময়ের চোরাবালিতে। সেটি এমনভাবেই যে, চলতি মৌসুমের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পর্যন্ত খেলার সুযোগ পান না। অথচ ঠিকঠাক পরিচর্যায় ছয় টেস্টে ১৬, তিন ওয়ানডেতে ৪ এবং এক টি-টোয়েন্টিতে ২ উইকেটের রেকর্ড আরো কত ভালোই না হতে পারত!

যেমনটা করে দেখাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই ৭ উইকেট। পরের ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক। দুই টেস্টে ১৯ উইকেটের এই গতি তো ধরে রাখা সম্ভব না; তবু ১২ টেস্টে ৪৮ শিকারও বা মন্দ কী! বাকি দুই ফরম্যাটে অবশ্য নিজের কার্যকারিতার প্রমাণ এখনো সেভাবে দিতে পারেননি মেহেদী। আট ওয়ানডেতে নেন ৭ উইকেট আর তিন টি-টোয়েন্টিতে ২। তবু বাংলাদেশের স্পিন-সাম্রাজ্যে আশার মশাল জ্বেলে রেখেছেন এই অফ স্পিনারই।

২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিষেক তাইজুল ইসলামের। অন্য অনেক সতীর্থের মতো গ্ল্যামারাস নন তিনি, কিন্তু নিভৃতে নিজের কাজ করে চলেছেন। তা একেবারেই টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে। ১৮ টেস্টে ৬৬ শিকার তাঁর। ওয়ানডে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করে ২০১৫ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ মিললেও এই ফরম্যাটে পারফরম্যান্সের ডানা মেলেনি। পরের চার ম্যাচে মাত্র এক শিকার দেয় সে সাক্ষ্য।

ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার আরাফাত সানির জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটাই ছিল বড় চমক। তা বছর দুয়েক মন্দ সেবা দেননি বাংলাদেশকে। ১৬ ওয়ানডেতে ২৪ এবং ১০ টি-টোয়েন্টিতে ১২ শিকার এই বাঁহাতি স্পিনারের। অ্যাকশন সমস্যায় এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা কেলেঙ্কারিতে আরাফাত এখন হিসাবের বাইরে।

বাঁহাতি স্পিনার সাকলায়েন সজীব একটিমাত্র টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০১৬ বিশ্বকাপে; কোনো উইকেট পাননি। তাঁর ওপর আবার আস্থা রাখার কারণ খুঁজে পায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামের রেকর্ড অমন আহামরি নয়। তিন ওয়ানডেতে ৫ এবং এক টেস্টে ১ উইকেট।

লেগ স্পিনার তানভীর হায়দারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউজিল্যান্ড সফরে। দুই ওয়ানডেতে উইকেটশূন্য থাকার পর জাতীয় দলে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি। সাকিবের ইনজুরির কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ডাকা হয়েছিল এই লেগ স্পিনারকে। খেলানো হয়নি অবশ্য। চার বছর পর তখন টেস্ট খেলেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অভিষেক হয় তিন স্পিনারের- বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম, অফ স্পিনার আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান। জাতীয় দলে তাঁদের পথচলা শুরু হলো মাত্র।

এঁদের বাইরে শুভাগত হোম ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে খেলেছিলেন চারটি। তখন তিনি পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দলে তাঁর প্রত্যাবর্তন স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার হিসেবে। তখনকার প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ তো বলতেনই, দেশের সেরা অফ স্পিনার শুভাগত। কিন্তু তাঁর ফেরাটা সুখকর হয়নি মোটেও। ওয়ানডেতে আর সুযোগ পাননি। আট টেস্টে ৮ উইকেট এবং পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে ২ উইকেটের পারফরম্যান্সে ধরে রাখতে পারেননি জাতীয় দলের জায়গা।

স্পিনারদের দেশ বাংলাদেশে তাই স্পিনের অবস্থা যে খুব ভালো, তা বলা যাবে না। তাইতো ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসানের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটি না খেলা হয়ে যায়  বিপর্যয়ের বড় কারণ। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে তাঁর না যাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্ক আবার ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভেতর মহলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *