ব্রাসেলসে আগামীকাল অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) এই বৈঠক শুরু হবে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার জেনারেলদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি বা তাদের সম্পদ জব্দের পদক্ষেপ নেয়া হলে তা হবে ইইউ’র কঠোরতম পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এর আগে রোহিঙ্গা নিপীড়নে জড়িত মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।
একজন কূটনীতিকের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, অবিলম্বে সেই প্রস্তাব সামনে আনতে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদারিকো মঘেরিনিকে বলবেন জোটের মন্ত্রীরা। মিয়ানমারের ওপর নব্বইয়ের দশক থেকে আরোপিত ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা কীভাবে আরো জোরদার করা যায়, তা খুঁজে দেখতে বলা হবে তাকে।
ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠককে সামনে রেখে বাংলাদেশও কূটনৈতিকভাবে তৎপর রয়েছে। বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো এ জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে চলতি মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। সফরের ওপর আলোতপাত করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের প্রধান জেইন ল্যাম্বার্ড বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নতুন প্রস্তাব আনার সম্ভাবনা বেশি। চলতি মাসের শেষে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি বৈঠকে বসছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের জন্য ভবিষ্যত অর্থায়ন সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করার জন্য আমরা এর আগেই ইস্যুটি উত্থাপন করব। আর পরবর্তী মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব অনুমোদনের চেষ্টা আমাদের থাকবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা খুব অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে রয়েছে। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। তাদের মধ্যে ধর্মীয় চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এছাড়া তারা মানবপাচারেরও শিকার হতে পারে। এজন্য তাদের মৌলিক শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি যাতে নিবন্ধিত থাকে, সেজন্য আমরা কাজ করে যাব। কেননা নাগরিক হিসাবে স্বীকার করে না – এমন মানুষদের আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে চাইবে না।
ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিংক জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার যাতে যথাযথ দায়িত্ব পালন এবং পরিবেশ তৈরি করে সে জন্য আরো চাপ দেয়া হচ্ছে।
রাখাইনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অংয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বৃটেনের শতাধিক এমপি গত বুধবার একটি চিঠিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইইউ যাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয় তা নিশ্চিত করার জন্য বৃটিশ সরকারের প্রতি এতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, অসংখ্য প্রমাণ থাকার পরও মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা অস্বীকার করে আসছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেসব আইন আছে তার কোনোটিই পরিবর্তন করা হয়নি। দুই বছর আগে (অং সান সু চি’র নেতৃত্বে) ক্ষমতায় আসা বর্তমান মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের অবস্থা উন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অংয়ের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার ঘটনা তাকে আরও বেশি সাহসী করে তুলছে।
বৃটিশ এমপিরা বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রস্তাব দিলে চীন ও রাশিয়া তার বিরোধিতা করবে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে এই দু’টি দেশকে বোঝানো, যেন তারা (রোহিঙ্গা ইস্যুতে) নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে।
মিয়ানমারের নব নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত
ঢাকায় মিয়ানমারের নব নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত উইন ও আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান রাখাইনে
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আজ রোহিঙ্গা শিশুদের ওপর রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন হলে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বলেন, অব্যাহত বঞ্চনা, নিপীড়ন ও পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর সামরিক নৃশংসতা রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ। আমাদের স্বীকার করতেই হবে রাখাইন রাজ্যেই রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি এবং সেখানেই তার সমন্বিত সমাধান খুঁজতে হবে। বাংলাদেশ অন্যায্যভাবে আজ পর্যন্ত এই বোঝা বহন করে যাচ্ছে।