রংপুরে বোরো চাষে সেচ খরচ বৃদ্ধি

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি রংপুর

095140a1‘বোরো আবাদে খরচতো আগের চ্যায়া বেশি হইচে, ধানের ফির ঠিকমতন দাম পাওয়া যায় না। তয় বসি থাকলেতো চইলবার নয়-সময়মতন আবাদ না করলে হামরা কি খ্যায়া বাঁচমো।’

শৈত্য প্রবাহসহ ঘন কুয়াশার মধ্যে বোরো ধানের চারা রোপণকালে এসব কথা বলেন, রংপুর নগরীর চব্বিশহাজারী এলাকার ক্ষুদ্র কৃষক আবেদ আলী। বোরো আবাদই ভরসা রংপুর অঞ্চলের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের।
শৈত্যপ্রবাহ শেষ না হতেই মৌসুমের শুরুতে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখানকার চাষিরা তাই কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু এ বছর সেচ খরচ বাড়বে। সে তুলনায় বাজারে ধানের দাম কম। এতে বোরো আবাদসহ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শৈত্য প্রবাহসহ শত প্রতিকূল অবস্থাতেও সময়মতো বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। রংপুর নগরীর উত্তম হাজিরহাট এলাকার চাষি বশারত আলী বলেন, ‘বোরোর আবাদ না করলে হামাক না খ্যায়া মরা নাগিল হয়। এবার দুই বিঘা জমিত চারা নাগাচু (লাগানো হয়েছে), আরো দুই বিঘা জমিত বোরো চাষের আশা আছিল। তয় পানির (সেচ খরচ) দাম বাড়ার কারণে আর তা হবার নয়।’

গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের বর্গাচাষি মফিজার রহমান বলেন, ‘মোর নিজের কোনো জমি নাই। প্রতিবছর বর্গা নিয়া ৪-৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করোং। এবার (এ বছর) দেড় বিঘা জমিতে চারা নাগাচু। পানির (সেচ) দাম বাড়ার কথা শুনি বোরো আবাদের হাউস (শখ) মিটি গেইছে।’

গতবছর বোরো চাষে সেচযন্ত্র মালিকরা প্রতি ঘণ্টা পানির দাম ৬০ টাকা নিলেও মৌসুমের শুরুতে নানা অজুহাতে এ বছর ১০০ টাকা ঘণ্টাতেও পানি মিলবে না বলে আশঙ্কা  করেন তিনি। চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি করছিলেন তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান।

তিনি বলেন, মৌসুমে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় এমনিতে প্রতিবিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়। তার ওপর সেচের কারণে বোরোতে উৎপাদন খরচ বাড়লে বেকায়দায় পড়তে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ৭১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় এক লাখ ৩৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় এক লাখ ৩০ হাজার ৪৯৫ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় এক লাখ ১১ হাজার ৮৪২ হেক্টর, লালমনিরহাট জেলায় ৫১ হাজার ৯৫ হেক্টর ও  নীলফামারী জেলায় ৮৪ হাজার ২৭৯ হেক্টর।

এসব জেলায় বোরো ফসলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৪ মেট্রিকটন (চাউল)। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বোরো ধানের বীজতলা করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে। গতকাল ৫ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমিতে চারা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে বলেও সূত্র জানায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বোরো আবাদের সময়। চারা রোপণের ভরা মৌসুম চলছে উল্লেখ করে তারা বলেন, যে হারে চারা লাগানো হচ্ছে তাতে ওই সময় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ জন্য বোরো আবাদে তীক্ষ্ন নজরদারি করাসহ চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে নানা অজুহাতে গ্রামাঞ্চলে সেচের পানির দাম বেশি নিলে বোরোতে উৎপাদন খরচ বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *