এবার চোখের বদলে জিহ্বা দিয়ে দেখা যাবে!

বিচিত্র

cokhলেখক : মূসা আমান

আমরা বাস্তব জীবনে কত হতাশা নিয়ে থাকি। ভাবি জীবনে তো কিছুই পাওয়া হলো না। মানুষ মাত্রই হতাশ এক প্রাণী। কিন্তু ভাই কখনো কি ভেবেছেন আপনার সঙ্গে কি সব সম্পদ খোদাতায়ালা দিয়েছেন? না দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা কেউ বুঝেন না। ভাবতে পারেন অনেক মানুষ আছে যারা জন্মের পর দুনিয়ার আলো দেখে নাই। মানুষের আকৃতি কিরকম সে সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নাই। সে ভাবতেও পারেনা দেখা বলে একটা ব্যাপার যে পৃথিবীতে আছে। সে হিসেবে আপনি আমি অনেকটাই সুখী। কিন্তু মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী যে বিজ্ঞান দিয়ে তার সব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠছে। যেখানে মানুষ মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর চিন্তা করছে সেখানে কিছু মানুষ দুনিয়া না দেখেই চলে যাবে সেটা বিজ্ঞানীদের কাছে অবিচার বলে মনে হয়েছে। তাই বিজ্ঞান আজ জয় করতে চলেছে অন্ধত্বকে! কিভাবে? হুম প্রক্রিয়াটার নাম ব্রেইন পোর্টিং যার সাথে চোখের মোটেও কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের আজকের গল্প মোটামুটি এ সম্পর্কেই।

আচ্ছা আপনি কি কখনো স্বপ্ন দেখেছেন? আমি জানি অবশ্যই দেখেছেন। কারণ স্বপ্ন দেখলে বুঝা যায় আপনার ব্রেইন সঠিক ভাবে বিশ্রাম ও তথ্য পুনর্বিন্যাসের কাজ চালাচ্ছে। আপনি জীবন যাপন করবেন, মাথা খাটাবেন কিন্তু স্বপ্ন দেখবেন না এটা কখনো হয় না। আচ্ছা স্বপ্নের ভেতর অপরিচিত কাউকে দেখেছেন? না ভাই হাফ গ্যারান্টি দিতে পারি যে দেখেন নি। ফুল গ্যারান্টি দিতে পারছি না। কারণ সম্ভাব্যতার সূত্র অনুসারে আপনি একটা জলজ্যান্ত মানুষ হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও শতকরা পঞ্চাশ-ভাগ :p । আমরা তাই স্বপ্নে দেখি যা আমরা পূর্বে বাস্তবে দেখেছি। না দেখা কোন জিনিস আপনি কখনো স্বপ্নে দেখবেন না। আপনি কি জানেন স্বপ্নে আপনি কোন বর্ণ বা গন্ধ পাবেন না? চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এখন একটা প্রশ্ন এসেই যায় জন্মান্ধরা কি কোন স্বপ্ন দেখেনা? দেখে ভাই অবশ্যই দেখে। তবে তাদের স্বপ্নগুলো হয় অডিও অর্থাৎ শুধু শব্দই শুনে কোন ছবি বা ভিডিও আই মিন প্রবাহ চিত্র দেখেনা।
এখন একটা কথা আপনি ভাত খাচ্ছেন। তরকারিতে লবণ কম হয়েছে। কিভাবে বুঝলেন? আপনাদের বেশির ভাগেরই উত্তর হবে “কেনো ভাই মুখে পুরলে জিহ্বা দিয়েই তো বুঝা যায়!”। উত্তরটা ফেলে দেয়ার মতো না। কিন্তু যদি আমি বলি না ভাই এ স্বাদ আপনি পেয়েছেন আপনার জিহ্বা পিছনে লাগানো স্নায়ুতন্ত্র আপনার মস্তিষ্ক বৈদ্যুতিক সঙ্কেত পাঠানোর ফলে। প্রথমে আপনার জিহ্বায় লাগানো সেন্সর একটি জিনিসের স্পর্শে যায়, তখন সেন্সরের পিছনে লাগানো তার ইলেকট্রিক সিগনাল বহন করে (পাগল নাকি?!)। না ভাই পাগল না তার যেমন কারেন্ট প্রবাহ করে আপনার কম্পিউটারে ইলেকট্রনিক সার্কিটে সিগন্যাল পাঠায়, তেমনি মাথার কাছে সিগনাল পাঠায়। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের জন্য নার্ভ ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কম্পাংক-যুক্ত যুক্ত সিগনাল বহন করে। আর সে সিগনাল অনুযায়ী মস্তিষ্ক সাড়া প্রদান করে।
এবার আসেন আরো বড় আলোচনায় যাই। স্কাইপে আপনারা অনেকেই ভিডিও চ্যাট করেছেন। আপনার ওয়েবক্যামটা দেখেছেন? সবার আগে একটা ক্যামেরা কম্পিউটারে লাগানো থাকে,তারপর সে ক্যামেরার সামনে আপনি যখন আপনার মুখমণ্ডল প্রদর্শন করেন তখন আপনার ওয়েবক্যামের পেছনে লাগানো লম্বা তারটা দিয়ে আপনার চলমান চিত্র কম্পিউটার সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটে যায়। কেমনে যায়? কেন ভাই ইলেকট্রিক সিগন্যালে বাইনারি কোড হিসেবে। ঠিক আপনি যে চোখে( as webcame) দেখেন সে চোখের পেছনে আছে অপটিক্যাল নার্ভ। এই অপটিক্যাল নার্ভ আপনার প্রিয় ওয়েবক্যামের পিছনের তারের মতো কাজ করে।(আর আপনার মাথা তো বিরাট একটা cpu তা না বলে দিলেও হবে।) তো মুল কথা হচ্ছে আমরা আমাদের ডেস্কটপ সিপিউতে বিভিন্ন এনিমেশন ক্রিয়েট করতে পারি। একদম বাস্তব না হলেও গ্রাফিক্স দিয়ে ফাটাফাটি রকমের থ্রিডি মুভি ক্রিয়েট করতে পারি তাইলে মাথার ভেতরেও সে রকম কি সম্ভব? হ্যাঁ ভাই আলবাত সম্ভব।
তাহলে শুনেন একটা মজার গল্প! ইউনিভার্সিটি অব উইস্কন্সিন মেডিসিনে বসে আছেন research in sensory substitution বিষয়ের smith kettlewell. তার সামনে চেয়ারে আসীন একজন জন্মান্ধ। জন্মান্ধ ব্যক্তির কাছের হাতের চেয়ারে একটি ক্যামেরা যার তার গিয়ে লেগেছে লোকটির জিহ্বায় বসানো সেন্সরে। এবার লোকটির সামনে পিং পং বল নিয়ে যাওয়া হলে লোকটি আশ্চর্যজনকভাবে পিনপং বলের নিখুঁত একটি ইমেজ দেখতে পান। আমি আপনাদের আগেই বলছি কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাহায্য ছাড়াই মাথার ভেতরেই কোন কিছুর স্পর্শ ছবি বা গন্ধ ইত্যাদি ক্রিয়েট করা যায়।তাই লোকটির ক্যামেরার সামনে যখন পিনপং বল নিয়ে যাওয়া হয় তার ক্যামেরার ছবি বৈদ্যুতিক সংকেত হিসেবে জিহ্বায় লাগানো স্টিমুলেটরে যায় এবং সেখানে সেটি জৈবিক সিগনালে পরিণত হয়। শেষে লোকটির মস্তিষ্ক একটি ইমেজ সৃষ্টি করে যা বাস্তবের মতো না হলেও কম্পিউটারের এনিমেশনের চেয়ে খারাপ না। এভাবে আপনি স্টিমুলেটর দিয়ে ব্রেইনকে দিতে পারবেন স্বাদের, গন্ধের, স্পর্শের অনুভুতি। আর পুরো সিস্টেমটির নাম ব্রেইন পোর্ট। এবার আশা করি পরিষ্কার হল কেমনে জিহ্বা দিয়া দেখা যায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *