আবদুল হামিদ আবারো রাষ্ট্রপতি হতে পারেন

Slider বাংলার সুখবর
 c4b320d53db2ace2558a6e633e1116ee-5a6817495e293

ঢাকা: মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন—এটা নিয়ে দলীয় ফোরামে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখে মুখে বেশ কিছু নাম ঘুরছে। এর মধ্যে আবদুল হামিদকেই রেখে দেওয়ার সম্ভাবনার কথাই বেশি আলোচিত হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, এ বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন—এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবদুল হামিদই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন—এটা দলীয় প্রধানের নানা সময়ের কথাবার্তায় আঁচ করা গেছে। তবে এরপরও নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক হলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডেকে আলোচনা হবে। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মেনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হবে। রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী ঘোষণা করবে। আর একক প্রার্থী থাকার অর্থ হলো আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত সোমবার  বলেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে মর্মে নির্বাচন কমিশন সূত্রে তিনি আভাস পেয়েছেন। সাংসদদের ভোটে সংসদের চলতি ১৯তম অধিবেশনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন হবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের ২৩ এপ্রিল। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ অবসানে পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী আজ ২৪ জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষণগণনা।

রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে ভোটের প্রয়োজন হবে না। একাধিক প্রার্থী থাকলে ভোট হবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীরা সমান ভোট পেলে লটারি হবে। নির্বাচন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে সংসদ সচিবালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিকেলেই সংসদ থেকে জবাব দেওয়া হয়। আজ বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সংসদ ভবনে যাবেন।

এদিকে আবদুল হামিদকেই কেন বেছে নেওয়া হবে, এর কিছু কারণের কথা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁদের অনেকেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী তাঁকে ভালো জানেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি অভিজ্ঞ। তাঁর সাদাসিধে জীবন গণমানুষের সঙ্গে মানানসই। এ ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকটে, পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে সৃষ্ট সংকটে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা খুব একটা নেই।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপি এবারও সোচ্চার। তবে দলটি এবার আর নির্বাচন বর্জন করবে বলে মনে হয় না। ফলে এবারের নির্বাচনটা বেশ কঠিনই হবে। এ সময় কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের বিকল্প নেই। এ বিবেচনায় আবদুল হামিদকে সেরা বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত অরাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ জিল্লুর রহমান ও আবদুল হামিদের মতো ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপতি করে সুফল পেয়েছে। এর আগে আবদুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনীর ক্যু ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। আর অরাজনৈতিক ব্যক্তি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি করার পর এক-এগারো এসেছিল।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ বেশ কিছু নাম গণমাধ্যমে আসছে। কিন্তু এগুলোর সম্ভাবনা কতটুকু, সেটা নিয়েই পরক্ষণেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন নিজেরাই।

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দলের একাধিক নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কারও এখনই রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর অন্যদের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচিতি বা অবদান আবদুল হামিদের চেয়ে বেশি নয়। প্রধানমন্ত্রীর পর রাষ্ট্রপতি পদেও আরেকজন নারীকে নির্বাচিত করার সম্ভাবনা কম।

আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি করার সময় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্য সাজেদা চৌধুরীর নাম আলোচনায় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বয়সে ছোট কাউকেও রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিবেচনায় নেওয়ার সম্ভাবনা কম। এসব কারণে অনেক নাম এমনিতেই বাদ পড়ে যাবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান  বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে দলে এখনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনের সময় কাছাকাছি এলে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *