অনশনে প্রাথমিকের শিক্ষকেরা : ফলাফল আটকে দেয়ার হুঁশিয়ারি

Slider শিক্ষা

278905_112

 

 

 

 

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের সাথে নিজেদের বেতন বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন পালন করছেন সহকারী শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে জাতীয় বেতন স্কেলের দাবি প্রাথমিকের এ সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষকের। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অনশন শুরু করে শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোট। দাবির পক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের আগ পর্যন্ত এ অনশন চলবে বলে জানান শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। দাবি আদায় না হলে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল আটকে দেয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করা হবে না বলেও ঘোষণা তাদের।

অনশন চলাকালে সহকারী শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭৩ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল একই ছিল। তারপর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপে ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন। ২০০৬ সালের পর থেকে বেতন স্কেলের ব্যবধান বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ঘোষণা অনুযায়ী ব্যবধান দাঁড়ায় তিন ধাপে। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেও প্রধান শিক্ষক থেকে তিন ধাপ নিচে বেতন পাচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা। এই বৈষম্যের নিরসন হওয়া জরুরি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বেতন বৈষম্য দূরীকরণের এমন কোনো কাজ নেই যা আমরা করিনি। প্রধানমন্ত্রী ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর স্মারকলিপি, খোলাচিঠি প্রদানসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনার করেছি। অবশেষে আজ আমরা অনশন কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছি। তারা বলেন, আমাদের এ দাবিকে সবাই যৌক্তিক দাবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবুও এ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ার পিছনে কী কারণ রয়েছে তা আমরা জানি না। আমাদের বিশ্বাস শিক্ষকদের এ যৌক্তিক দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেনি। তাই প্রধানমন্ত্রীকে জানানো এবং আমাদের দাবি আদায় করার জন্য এ অনশন।

প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে শিক্ষকদের জীবনমান উন্নত করতে হবে মন্তব্য করে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষার তিন স্তরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাথমিক শিক্ষা। এ স্তরের মানোন্নয়ন ব্যতিরেকে অন্য স্তরের মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাও সম্ভব নয়।

তারা বলেন, আমরা কেবল প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা শেষ করে শীতকালীন অবকাশে এসেছি। আমাদের এ যৌক্তিক দাবি মেনে বৈষম্য দূর করা না হলে বন্ধ হয়ে যাবে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা। বন্ধ হয়ে যাবে ১ জানুয়ারির বই উৎসব।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান- জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী রবিউল। তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে কোথাও যাব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ অনশন অব্যাহত থাকবে।

অনশন চলাকালে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রাথমকি সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি তপন কুমার মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুর রহমান, জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোসা. শাহীনুর আক্তার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূইয়া, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ শামসুদ্দীন মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক প্রমুখ।

এর আগে সকালে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের মাধ্যমে অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। এরপরে জাতীয় সংগীতের সুরে মুখরিত ছিল পুরো শহীদ মিনার এলাকা। জাতীয় সংগীত শেষে বক্তব্য প্রধান করেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। এতে সহকারী শিক্ষক মহাজোটের বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনশন কর্মসূচিতে জড়ো হন শিক্ষকেরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। শিক্ষকদের আগমনে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ জনাকীর্ণ হতে থাকে। এ সময় তাদের সাথে চাটাই, বিছানাসহ তাদের রাত্রিযাপনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসতে দেখা যায়। আগের রাতের শ্রান্ত সফর শেষে দিনভর অনশন করেন শিক্ষকেরা। সর্বশেষ রাতের অনশনে শীতের দীর্ঘ রজনী কাটানোর প্রতীক্ষায় মানুষ গড়ার কারিগররা। প্রতীক্ষা শুধু সম্মানসূচক কোনো ঘোষণার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *