এখন ভোট উৎসবের অপেক্ষা

Slider সারাদেশ

185433EC_kalerkantho_pic

রংপুর: শেষ প্রচারে প্রার্থীরা ছুটেছেন অবিরাম। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। পাড়া থেকে মহল্লায়। প্রার্থীর সঙ্গে সমর্থকেরাও। নানা প্রার্থীর সমর্থনে রাস্তায় শুধু মানুষ আর মানুষ। মুখে মুখে দুটি শব্দ—দোয়া আর ভোট।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শেষ। রাত পোহালেই ভোট। শহরে তাই উৎসবের পরিবেশ, সবার মুখে হাসি। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় প্রচারণা শেষ হয়েছে। এবার প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রার্থীরাও একে অন্যের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াননি। তাঁরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখেছেন।

আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কমিটি এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মাঠে তৎপর ছিলেন। কাঁপিয়ে তুলেছেন পাড়া-মহল্লা। জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, ৩৩টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই ৭১ সদস্যের ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি কেন্দ্রে কর্মীদের অবস্থান থাকবে।

নগরের এক স্থানে এক প্রার্থীর গণসংযোগ শেষ হতে না-হতেই আসছেন আরেক প্রার্থী। তাঁরা ক্লান্তিহীন গণসংযোগ করেছেন। মাথা ছুঁয়ে দোয়া নিয়েছেন।

ভোটের এত সুন্দর পরিবেশ দেখে কলেজ রোডের বাসিন্দা ভাস্কর অনীক রেজা বলেন, ‘পুরো দেশ তাকিয়ে আছে রংপুরের দিকে। এত সুন্দর পরিবেশ! না দেখলে বোঝানো যাবে না। তবে শেষ পর্যন্ত যেন এমন পরিবেশ থাকে, এটি আমার প্রত্যাশা।’

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের অফিস ও আদালতপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, গোল হয়ে মানুষজন শুধু নির্বাচনের গল্পে ব্যস্ত। দুপুরের পর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একটু শান্তিতে কথা বলাও দুষ্কর ব্যাপার। একটার পর একটা মাইক। নানা সুরে গান গেয়ে ভোট প্রার্থনা করা হচ্ছিল। জারি-সারি ভাটিয়ালি, পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া গানের সুরে প্রচারণা চলে সমান তালে।

শেষ প্রচারণায় গতকাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদ গণসংযোগ করেছেন সিটি বাজার, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, প্রেসক্লাব এলাকা, বেতপট্টি, নবাবগঞ্জ বাজার, সুপার মার্কেট এলাকায়। বাবার জন্য ভোট চেয়ে প্রচার চালিয়েছেন ব্যবসায়ীপুত্র রিয়াজ আহমেদও।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ গত সোমবার রংপুরে এলেও নিজ বাড়ি পল্লী নিবাস থেকে বের হননি। তিনি সাংসদ হওয়ায় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামতে পারবেন না। আগামীকাল তিনি সেনপাড়া সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন। সাংবাদিকেরা তাঁর বাড়িতে ছুটে গেছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি আশা করছি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে। এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়।’

দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের পক্ষে এরশাদের ছোট ভাই দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও রংপুরে অবস্থান করছেন। তিনি দিনভর
নগরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে প্রার্থী মোস্তাফিজার সমর্থকদের নিয়ে কাচারি বাজার, মুন্সিপাড়া, কেরানীপাড়া, সিটি বাজার এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। বাবা মোস্তাফিজারের জন্য ভোট ও দোয়া চেয়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছেন মেডিকেলপড়ুয়া মেয়ে জারিন তাসনিমও।

বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান গতকাল গণসংযোগ করেছেন নগরের জুম্মাপাড়া, জলছত্র, চওড়াপাড়া, বাহারকাছনা, গুলালবুদাই এলাকায়। জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে নগরজুড়ে প্রচারে বেরিয়েছেন।

বাসদ-সিপিবির প্রার্থী আবদুল কুদ্দুস গতকাল শেষ প্রচরণায় শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে চার কিলোমিটার এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগ করেছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী এ টি এম গোলাম মোস্তফা গণসংযোগ করেছেন জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া, ককটিপাড়া এলাকায়। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী সেলিম আখতার শহরের কেরানীপাড়া, ধাপ, জলকর এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। জাপার চেয়ারম্যান এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার গণসংযোগ করেছেন কামারপাড়া, গুড়াতিপাড়া, বাবু খা এলাকায়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার  বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সম্পূর্ণ অনুকূলে রয়েছে। তাঁর আশা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট হবে। তবু চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত।

নিরাপত্তাব্যবস্থা

নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, শহরের রাস্তায় বিজিবির টহল শুরু হয়েছে। গতকাল মধ্যরাত থেকে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়েছে। সেই সঙ্গে মহাসড়ক ছাড়া শহরে ভারী যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

আজ বুধবার থেকে সব ওয়ার্ডে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত আলাদাভাবে মাঠে থাকছেন। ২১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) থাকছে। প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন করে ফোর্স রয়েছে। র‌্যাবের ৩৩টি টিম ছাড়াও থাকছে ২টি রিজার্ভ টিম। প্রতিটি কেন্দ্রে আরও থাকছেন ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য। ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে ২৪ জন করে ফোর্স থাকছে। সব মিলে ৫ হাজার ৫৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন।

একটি কেন্দ্রে ইভিএম ও ৩টি কেন্দ্র সিসিটিভির আওতায়

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং ওই কেন্দ্রসহ ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে লায়ন্স স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রসহ তিনটি কেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *